উত্তরবঙ্গের জেলা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই গ্রামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম (৩৫) অভাবের কারণে নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। হাসিনা বেগম জোকতার আলীর স্ত্রী এবং একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের মেয়ে।
জানা গেছে, ১৮-২০ বছর আগে একই গ্রামের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর সাথে বিয়ে হয় হাসিনার। হাসিনা ছিল জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছুদিন স্বামীর বাড়িতে থাকলেও পরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনার ঠাঁই হয় তালুক হরিদাস নয়াটারী বাবার বাড়িতে। স্বামী জোকতার সংসারের খরচ না দিলেও হাসিনার সাথে সম্পর্ক রেখেছেন। এরই মাঝে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। এরইমধ্যে বড় মেয়ে রোসনার বিয়েও দেয়া হয়েছে।
ফুঁটো টিনের ওপর পলিথিন সাঁটানো ঝুঁপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম। করোনাকালে মাঠে কাজ না থাকায় বেকার কৃষি শ্রমিক হাসিনা বেগম ঋণ করে অনাহারে-অর্ধাহারে সংসার চালান। দেনা হয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরই মাঝে গত মঙ্গলবার সকালে হাসিনা বেগম একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। অভাবের মাঝে সন্তান লালন পালন নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান তিনি।
তার নিঃসন্তান ভাই কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাধা দেন হাসিনা বেগম ও তার বড় ছেলে হাসান।
এদিকে, অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পতির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে রাজি করান। হাসিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোরপূর্বক সন্তানকে তুলে দেন রাজাহাটের দম্পতির হাতে।
নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋণের ১০ হাজার পরিশোধ করেন হাসিনা বেগম। তবে, নিজের সন্তানকে হারিয়ে কান্না করে দিন কাটছে তার। ছোট ভাইকে রাখতে না পেরে বড় ভাই হাসান বাবা-মায়ের সাথে অভিমান করে পরিবার ছেড়ে চলে গেছে।
হাসিনার বড় ছেলে হোটেল শ্রমিক হাসান বলেন, ‘কষ্ট হলেও ভাইকে বিক্রি না করতে বলায় বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করার হুমকিসহ মারপিট করার চেষ্টা করেছে। অর্থকষ্টে নবজাতক বিক্রি করে মা এখন কান্না করছে। এ দুঃখে আমি বাড়ি ছেড়ে মালিকের হোটেলেই থাকি। ২০ হাজার টাকা পেলে ভাইকে ফেরত নিতে পারতাম। কিন্তু টাকা তো নেই।’
হাসিনার ভাই কেরামত আলী বলেন, ‘বিয়ের ১০ বছর অতিবাহিত হলেও আমাদের সংসারে সন্তান নেই। বোনের সন্তানকে নেয়ার ইচ্ছে ছিল। বোনের স্বামী টাকার বিনিময়ে নবজাতক ভাগিনাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে।’
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম বলেন, ‘গরিব মানুষ খাবার পাই না। প্রতিবেশী অধিরের আত্নীয়ের কাছে দিয়েছি। তারা ভালোভাবে দেখবে। আমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে গতকাল হাওলাতি (ঋণের) ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।’
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রোখসানারা মুক্তা বলেন, ‘অভাবের কারণেই নবজাতককে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন হাসিনা বেগম। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। তাকে আর্থিক সহায়তা করলে হয়তো নবজাতককে বিক্রি করতে হতো না।’